তারাবির নামাজ সম্পর্কে বিশদ আলোচনা তারাবির নামাজ রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

এটি এশার নামাজের পর আদায় করা হয় এবং রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল। --- তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে ভিন্ন মতামত তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ফকিহগণ ও হাদিসবিদদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। মূলত দুইটি মতামত পাওয়া যায়— ১. ১১ রাকাত (৮ রাকাত তারাবি + ৩ রাকাত বিতর) এই মত অনুসারে, রাসুলুল্লাহ ﷺ সাধারণত ৮ রাকাত কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং রমজানেও তাই করতেন। হাদিস প্রমাণ: হজরত আয়িশা (রা.) বলেন: "নবী ﷺ রমজান ও অন্যান্য সময় ১১ রাকাতের বেশি নামাজ পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, এত দীর্ঘ ও সুন্দর করতেন যে বর্ণনা করা কঠিন, তারপর আবার চার রাকাত পড়তেন এবং শেষে তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।" ???? (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১১৪৭; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৩৮) এই হাদিসকে অনেক আলেম তারাবির নামাজের জন্য প্রযোজ্য মনে করেন। --- ২. ২০ রাকাত তারাবি + ৩ রাকাত বিতর (সর্বাধিক প্রচলিত অভিমত) বেশিরভাগ ফকিহ এবং চার মাযহাবের অধিকাংশ আলেমগণ রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সাহাবাদের আমল ও খলিফাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ রাকাত তারাবির পক্ষে মত দেন। হাদিস প্রমাণ: ১️⃣ হজরত উমর (রা.) এর আমলে ২০ রাকাত তারাবি পড়া হতো "হজরত উমর (রা.) তার সময়ে উবাই ইবন কাব (রা.)-কে মুসল্লিদের জন্য ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়াতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।" ???? (সুনান আল-বাইহাকি, হাদিস: ৪৩৯৬) ২️⃣ সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মত আমল হজরত উমর (রা.), উসমান (রা.) ও আলী (রা.)-এর খেলাফতকালেও ২০ রাকাত তারাবি পড়া হতো। কোনো সাহাবা এর বিরোধিতা করেননি, তাই এটি "ইজমা" (সম্মিলিত মতামত) হিসাবে গণ্য হয়। ৩️⃣ তাবেঈ ও চার ইমামের মতামত ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালিক (রহ.), ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.)—এই চারজনই ২০ রাকাত তারাবিকে সুন্নাত মনে করেন। --- তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ১️⃣ রমজানে কিয়ামুল লাইল করলে গুনাহ মাফ হয় رسول الله ﷺ قال: "যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (তারাবি) আদায় করে, তার অতীত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" ???? (সহিহ বুখারি: ৩৭, সহিহ মুসলিম: ৭৫৯) ২️⃣ তারাবির নামাজ নফল হলেও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ তারাবির নামাজ ফরজ নয়, বরং এটি "সুন্নাতে মুয়াক্কাদা" (নবী ﷺ সর্বদা আদায় করতেন)। ৩️⃣ গোটা কুরআন খতমের গুরুত্ব রাসুলুল্লাহ ﷺ জিবরাইল (আ.) এর সাথে রমজানে কুরআন খতম করতেন। তাই তারাবিতে কুরআন খতম করা মুস্তাহাব। --- তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম ১️⃣ তারাবি ২ রাকাত করে পড়া হয়। ২️⃣ নিয়ত: "আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবির নামাজ আদায় করছি।" ৩️⃣ সুন্নাত নিয়ম: দীর্ঘ কিয়াম (কুরআন তিলাওয়াত) করা উত্তম। প্রতি চার রাকাত পর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া যায় (তাসবিহ, দোয়া, ইস্তেগফার পড়া উত্তম)। ৪️⃣ বিতর নামাজ: তারাবির পর ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়া সুন্নাত। --- উপসংহার: কত রাকাত পড়া উচিত? ৮ রাকাত এবং ২০ রাকাত—উভয়েরই দলিল রয়েছে। রাসুল ﷺ এর আমলে ৮ রাকাত পাওয়া যায়, তবে সাহাবাদের সময় থেকে ২০ রাকাত পড়া হচ্ছে। অধিকাংশ আলেম ও চার মাযহাবের অনুসারীরা ২০ রাকাত তারাবি পড়াকে সুন্নাত মনে করেন। অতএব, কেউ যদি ৮ রাকাত পড়ে, তাহলে সেটি সহিহ এবং কেউ যদি ২০ রাকাত পড়ে, সেটিও সহিহ ও অধিক উত্তম।