প্রাচীন মিশরের শক্তিশালী ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসিস: জীবন,

প্রাচীন মিশরের শক্তিশালী ফেরাউন দ্বিতীয় রামেসিস: জীবন,
শাসন ও মমির রহস্য প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ও দীর্ঘকালীন শাসক ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিস। তিনি তার সামরিক কৌশল, রাজকীয় স্থাপত্য এবং বিতর্কিত শাসন নীতির জন্য পরিচিত। ---
জন্ম ও রাজত্বকাল
জন্ম: আনুমানিক ১৩০৩ খ্রিস্টপূর্ব মৃত্যু: ১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব, প্রায় ৯০ বছর বয়সে রাজত্বকাল: ৬৬ বছর (১২৭৯-১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব) দ্বিতীয় রামেসিসের বাবা সেতি প্রথম ছিলেন মিশরের শক্তিশালী শাসকদের একজন। রাজ সিংহাসনে বসার পর তিনি সামরিক শক্তি বাড়িয়ে মিশরকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় পৌঁছে দেন। --
- শাসনব্যবস্থা ও নির্মাণকর্ম দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন একাধারে দক্ষ শাসক, যুদ্ধবাজ সেনাপতি এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী নির্মাতা। সামরিক শক্তি: তিনি হিট্টাইট সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিখ্যাত কাদেশের যুদ্ধ (১২৭৪ খ্রিস্টপূর্ব) পরিচালনা করেন, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় রথযুদ্ধ। যদিও যুদ্ধের কোনো চূড়ান্ত বিজয়ী ছিল না, তবে তিনি নিজেকে মহান বিজয়ী হিসেবে প্রচার করেন। স্থাপত্য কীর্তি: দ্বিতীয় রামেসিস অসংখ্য মন্দির, স্তম্ভ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন, যেমন— আবু সিম্বেল মন্দির, যেখানে তার বিশাল মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। রামেসিউম (তার সমাধিমন্দির) কার্নাক ও লুক্সরের বিভিন্ন স্থাপনা। --- অত্যাচার ও শোষণ
- দ্বিতীয় রামেসিসের শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং ক্ষমতাবানদের পক্ষে। 1. দাসপ্রথা ও নির্মম শোষণ: তিনি বিশাল স্থাপত্য নির্মাণের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক ও দাসকে কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করেন। ইতিহাসবিদদের মতে, তিনি সম্ভবত বনি ইসরাইল জাতির ওপর জুলুম ও নির্যাতন চালিয়েছিলেন এবং তাদের কঠোর শ্রমে বাধ্য করেছিলেন।
- শত্রুদের দমন ও নিষ্ঠুরতা: তার রাজত্বে বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করা হতো। হিট্টাইটদের সঙ্গে যুদ্ধের পর তিনি কূটনৈতিক চুক্তি করলেও রাজকীয় প্রচারণায় নিজেকে মহাশক্তিধর রাজা হিসেবে উপস্থাপন করেন। ---
- মৃত্যু ও মমির রহস্
- দ্বিতীয় রামেসিস প্রায় ৯০ বছর বয়সে মারা যান, যা তখনকার সময়ে অত্যন্ত দীর্ঘ জীবন ছিল। প্রাথমিক সমাধিস্থল: তার দেহ ভ্যালি অব দ্য কিংস (কেভি৭) সমাধিক্ষেত্রে রাখা হয়। মমির স্থানান্তর: চোরদের হাত থেকে বাঁচাতে, তার মমি পরে দেইর এল-বাহারি নামক এক গোপন কক্ষে সরিয়ে রাখা হয়। আবিষ্কার: ১৮৮১ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিকরা তার মমি
- আবিষ্কার
- করেন। এটি বর্তমানে কায়রো মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। বিস্ময়কর তথ্য: ১৯৭৬ সালে বিজ্ঞানীরা তার মমির পরীক্ষার পর দেখতে পান, তার দাঁত নষ্ট ছিল, আর্থ্রাইটিস ছিল, এবং মৃত্যু সম্ভবত বয়সজনিত কারণে হয়েছে। ---
- উপসংহার দ্বিতীয় রামেসিস ছিলেন মিশরের অন্যতম প্রভাবশালী ফেরাউন। একদিকে তিনি ছিলেন দক্ষ রাজা ও স্থপতি, অন্যদিকে শোষণ ও নিষ্ঠুরতার জন্যও সমালোচিত। তার মমি আজও মিশরের ইতিহাসের এক রহস্যময় ও আকর্ষণীয় অংশ।