রাজধানীর পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অনুমোদনহীন ড্রাইভিং স্কুল।

রাজধানীর পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অনুমোদনহীন ড্রাইভিং স্কুল।

রাজধানীর পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে যত্রতত্র গড়ে উঠছে অনুমোদনহীন ড্রাইভিং স্কুল।

এসব স্কুল চালুর আগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এসব স্কুলের কার্যক্রম চলছে।

ফলে বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অপরদিকে বাড়ছে দূর্ঘটনার ঝুকি। খোঁজ জানা গেছে, রাজধানীতে জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। এতে চালকের চাহিদাও বাড়ছে।

কিন্তু দক্ষ ও অভিজ্ঞ ড্রাইভার পাওয়া দূরহ। এতে চালকের চাহিদার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীতে ড্রাইভিং শেখানোর স্কুলের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এসব স্কুল থেকে কোনরকম ড্রাইভিং শিখে চালকরা রাস্তায় বের হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই। ফলে এ অদক্ষ ড্রাইভিংয়ের শিকার হয়ে অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ।

 খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, চাহিদা কাজে লগিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ড্রাইভিং স্কুল। আর এসব ড্রাইভিং স্কুলগুলো কোনো নিয়মনীতি না মেনেই চালকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আবার অদক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে এসব স্কুল থেকে বের হচ্ছে অসংখ্য চালক। যেখানে প্রশিক্ষকের নিজেরই নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। এর ফলে প্রতিদিনই শেষ হয়ে যাচ্ছে অনেকে তাজা প্রাণ।

শুধু কি আর্তনাদের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এসব জীবন? এমন প্রশ্ন সচেতন নগরবাসীর। আর অদক্ষ ড্রাইভার হওয়ায় প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ। উত্তরার সেক্টরগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ড্রাইভিং স্কুল। এসবের বেশির ভাগেরই নেই অনুমোদন। টং দোকান তুলে চলছে এসব ড্রাইভিং স্কুলের কার্যক্রম।

 শাহাপরান, আকরাম, কার ড্রাইভিং, উত্তরবঙ্গ ড্রাইভিং আপনজন ড্রাইভিংসহ বিভিন্ন নামে স্কুলের কার্যক্রম চলছে। ড্রাইভিং স্কুল চালু করতে শর্ত হলো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা থাকতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলের নিজস্ব জায়গা বা লাইসেন্স নেই। অথচ লাইন্সেস না থাকলেও সরকার অনুমোদিত লিখে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সব কার্যক্রম। এ স্কুলগুলোয় দুই থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ।

 এক মাসের কোর্সে ২০-২৫টি ক্লাস নেয়া হয়। প্রতিটি ক্লাসের সময় ২০-৩০ মিনিট। তবে এত অল্প সময়ের মধ্যে পুরোপুরিভাবে ড্রাইভিং শেখা সম্ভব নয়। আর এ অফার পেয়ে অনেক সাধারন মানুষ ড্রইভিং শিখতে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে মটর ড্রাইভিং স্কুল পরিচালনা সংক্রান্ত ধারা (৬৩) এতে বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে তাহলে বি আর টি এ এর অনুমোদিত রেজিস্ট্রেশন নাম্বার থাকতে হবে। যদি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার না থাকে তাহলে উক্ত স্কুল মালিক কে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা জরিমানা এবং উক্ত স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু কঠোর আইন থাকলেও সামান্য প্রয়োগ করার মতন কেউ নেই বললেই চলে।

 মাঝে মধ্যে বিআরটিএর ভ্রাম্যমান ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করে দু-একটি ড্রাইভিং স্কুলকে জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়। এতে যেন সাহস আরো বেড়েই যায়। ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশন আওতাধীন উত্তরাতে মিরপুরে ফুটপাত দখলে আছে ড্রাইভিং স্কুল নামক অসংখ্য টং দোকান। যাহার কিছু সংখ্যক ব্যতীত অধিকাংশই অবৈধ।

 প্রতিটা মোরে ড্রেনের উপরে ফুটপাতে টোং ঘর বসিয়ে স্কুল পরিচালনা করে আসছে। ফুটপাত পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের থাকলেও আমলে নিচ্ছে না তারাও। এ সমস্ত স্কুলগুল ট্রাফিকের নাকের ডগা দিয়ে চলছে সারাক্ষণ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ হাজার চালকের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু অনুমোদিত ড্রাইভিং স্কুলগুলো থেকে প্রতিবছর প্রশিক্ষিত হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার চালক। বাকি চালক কিভাবে তৈরি হচ্ছে এ প্রশ্ন সাধারণের। বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। আর সম্পদ নষ্ট হয় প্রায় পাঁচ থেক ছয় কোটি টাকার। রাজধানীর উত্তরায় অবৈধ ড্রাইভিং স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ শেষে চাকরির ব্যাপারেও সহযোগিতা করা হবে শতভাগ নিশ্চয়তার লোভ দেখানো বিজ্ঞাপন দিয়ে তঅল্প সময়ে প্রশিক্ষণ শেষ করছে অনেক ড্রাইভিং স্কুল।

এ ছাড়া অনেক স্কুল আছে, কোনো রকম জ্ঞান না দিয়ে শুধু ব্যবহারিক ক্লাস করে প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করছে। এক পরিসংখ্যায় দেখা যায়, সারা বাংলাদেশে অসংখ্য ড্রাইভিং স্কুল রয়েছে এর ভিতরে বিআরটিসি, ব্রাক, টিটিসি, ডিটিসিসহ ১৪৯টি বিআরটিএ অনুমোদিত ড্রাইভিং স্কুল রয়েছে। বাংলাদেশের ড্রাইভার একটি বড় সেক্টর, বাসা থেকে বের হলেই প্রয়োজন হয় গাড়ি, সেই গাড়িচালক জদি হয় অদক্ষ প্রশিক্ষকের হাতে তৈরি। আর সেই ড্রাইভার প্রশিক্ষণের স্কুল যদি হয় অদক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা পরিচালিত তাহলে কিভাবে দক্ষ চালক তৈরি হবে? গাড়ি চালানোর শিক্ষা কেন্দ্রই যদি হয় অশিক্ষিত/অদক্ষ দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত তাহলে কি শিখবে তারা? যেখানে শিক্ষা দিবে বৈধতার সেখানে তারা নিজেরাই অবৈধ।

 ড্রাইভিং শেখার পাশাপাশি প্রয়োজন ট্রাফিক আইন ও সড়কের নিয়ম শেখানো। অথচ তা তো শিখাচ্ছেই না কোনরকম স্টিয়ারিং ধরিয়ে দিলেই যেন হয়ে যাচ্ছে ড্রাইভার। শুধু তাই নয়, অবৈধ স্কুল গুলোর পিছনে রয়েছে অপশক্তি। তাদের এই অপশক্তি ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে বৈধ স্কুলগুলো। মনে হচ্ছে অবৈধর কাছে বৈধ জিম্মি। বৈধ স্কুলগুলোকে ফেলছে পদে পদে বিপদে।

 উত্তরায় বৈধভাবে ড্রাইভিং স্কুল পরিচালনা করছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিনিয়তই অবৈধ স্কুলের অপশক্তির প্রভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছে তারা।

কিছুদিন আগে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়, তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দিনের পর্যায়ক্রমে অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো আরো হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। বাংলাদশে যাত্রী কল্যাণ সমতিরি মহাসচবি মোজাম্মলে হক চৌধুরী বলেন, একজন দক্ষ চালক হতে হলে শিক্ষার জন্য দুই-তিন সপ্তাহ হাতে কলমে জ্ঞান নিতে হবে। পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানতো থাকবেই। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ের ওপর নজর দেয়া জরুরি। এগুলো হল রোড সাইন, ক্রসিং, ইউ টার্ন এ বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। 

এ ছাড়া মানসিকভাবে হতে হবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে এসব স্কুলে তা শিক্ষা দেয় কি না জানা নেই। না হয় এসব স্কুল বন্ধ করে দেয়া দরকার। না হয় এরা সাধারন মানুষের সাথে প্রতারণা করতেই থাকবে।