হিজলায় বীরদর্পে নিষিদ্ধ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, ঠিকাদারিতে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতারা

হিজলায় বীরদর্পে নিষিদ্ধ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, ঠিকাদারিতে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা
হাবিবুর রহমান, হিজলা: বরিশাল
বরিশালের হিজলা উপজেলায় নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ও গোপনে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চলমান রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ঠিকাদারি, ব্যবসা ও প্রশাসনিক সংযোগে পুরনো প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন আগের চেয়ে আরও সক্রিয়ভাবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার পতনের পর দলীয় কোন্দলে কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতারাও এখন ঠিকাদারির সিডিউলে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। কাজ বাগিয়ে নিতে লটারির মাধ্যমে ঠিকাদারি পাচ্ছেন, পুরনো আমলের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা কাজে লাগিয়ে তারা বিলসহ নানা সুবিধা গ্রহণ করছেন। প্রশাসনিক অফিসগুলোর ‘নার্ভ’ তারা ভালোভাবেই জানেন বলে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসুস্থ থাকায় বাসভবনেই সময় কাটাচ্ছেন বেশি।
তবে সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন হাওলাদার নিয়মিত উপজেলা পরিষদ এলাকায় উপস্থিত থাকেন। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক সময়ের কোণঠাসা এই নেতা এখন পুরো অঞ্চলের রাজনৈতিক মঞ্চে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন। এক সময়ে যিনি ডাকাত সর্দার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। যার শিষ্য হিসেবে পরিচিত মামুন, ইউসুফ, মিরাজ, হারুন ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন।
তাদের মোবাইল ফোন চেক করে এনায়েত হাওলাদারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও ততকালীন আওয়ামী প্রভাব বিস্তার করে বেচে গিয়ে হজ্বে চলে যান তিনি। হাস্য রস্যাত্বক ভাবে কেউ কেউ বলছেন বিনা ভোটে নির্বাচিত এই চেয়ারম্যানের হাতে “মধু”রয়েছে তাই তিনি প্রশাসনসহ প্রতিপক্ষ দল বিএনপি-জামায়াতেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার ছত্রছায়ায় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ঠিকাদারি করছেন অবলীলায়
হিজলা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিম্নোক্তভাবে ঠিকাদারি কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে—
আ. মন্নান (সেচ্ছাসেবক লীগ) – মাষ্টার এন্টারপ্রাইজ কালাম বেপারী (শ্রমিক লীগ) – মাষ্টার এন্টারপ্রাইজ সাইফুল ইসলাম প্রিন্স (যুবলীগ) – মাষ্টার এন্টারপ্রাইজ পলাশ (যুবলীগ) – দেওয়ান এন্টারপ্রাইজ রফিক মল্লিক (সেচ্ছাসেবক লীগ) – মল্লিক এন্টারপ্রাইজ সেলিম ফকির (আ. লীগ) – শারমিন এন্টারপ্রাইজ লোকমান (যুবলীগ) – মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ লিয়াকত কাজী (যুবলীগ) – কাজী জাকির বিল্ডার্স মাস্টার ইসমাইল হোসেন (আ. লীগ) – সোহেল ট্রেডার্স মিজান সরদার (উপজেলা যুবলীগ সভাপতি) – নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ হুমায়ুন কবির (সেচ্ছাসেবক লীগ) – তানহা এন্টারপ্রাইজ গালিব (যুবলীগ) – হাসিব এন্টারপ্রাইজ এদের মধ্যে পার্শ্ববর্তী আন্দারমানিক ইউনিয়নের লোকমান “মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ” নামে লাইসেন্স ব্যবহার করে ৮টির বেশি ঠিকাদারি কাজ করছেন।
আবুল কালাম বেপারী, শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, প্রায় ৬টি সাইটে ঠিকাদারি করছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক দেওয়ান সালাউদ্দিন রিমন বলেন, “অল্প কিছু স্বার্থান্বেষী বিএনপি নেতাকর্মী স্বার্থের বিনিময়ে এই আওয়ামী নেতাদের সহযোগিতা করছেন, বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন তাদের পার্টনার হিসেবে। অথচ এদের অনেকেই বিভিন্ন ইউনিয়নে গুজব ছড়াচ্ছেন, বিএনপি-জামায়াত নেতারাই সব সুবিধা নিচ্ছেন বলে বিভ্রান্ত করছেন জনগণকে।”
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক নুরুল আমিন বলেন, “নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতারা উপজেলা পরিষদ এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হাওলাদারকে নিয়মিত দেখা যায়। তিনি সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।
এছাড়াও সরকারের কর্মকাণ্ডকে বিকৃতভাবে প্রচার করে জনগণের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। প্রশাসনের নীরবতা এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে।”
হিজলায় প্রশাসনের চোখের সামনেই এভাবে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের কার্যক্রম ও ঠিকাদারিতে অংশগ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সচেতন মহলে।